সিম্পল মুভিং এভারেজ (এসএমএ) ইন্ডিকেটর, টেকনিক্যাল অ্যানালিসিস

 সিম্পল মুভিং এভারেজ ইন্ডিকেটর কি ?

সিম্পল মুভিং এভারেজ (SMA) হলো একটি নির্বাচিত সময় পরিসরের দামের গড়, সাধারণত ক্লোজিং প্রাইসের যোগফল গণনা করে, সময়কালের সংখ্যা দ্বারা ভাগ করা হয়।

 শেয়ার বাজারে কোনো শেয়ারের বা কোনো ইন্ডেক্সের বর্তমান পরিস্থিতি বোঝার জন্য যে পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়, তাকে টেকনিক্যাল এনালাইসিস বলে। টেকনিক্যাল এনালাইসিসের প্রধান উপকরণ হলো চার্ট। বিশেষত ক্যান্ডেল স্টিক চার্ট। এই ক্যান্ডেল স্টিক চার্টের ক্যান্ডেল গুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক থেকে বিচার করা হয় প্রাইস একশন; যা অনেক বড়ো বড়ো ট্রেডার, ইনভেস্টর ব্যবহার করে থাকেন।


 ছাড়া চার্ট সহজে বোঝার জন্য আরও বিভিন্ন রকমের টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ব্যবহার করা হয়। যার মধ্যে অন্যতম হলো মুভিং এভারেজ ইন্ডিকেটর।

Simple moving average indicator (SMA)

 এই মুভিং এভারেজ আবার দুই প্রকার। যথাঃ- সিম্পল মুভিং এভারেজ ও এক্সপোনেন্সিয়াল মুভিং এভারেজ। এই দুই প্রকার মুভিং এভারেজ ছাড়া আরও একটি মুভিং এভারেজ ব্যবহার কেউ কেউ করে থাকেন তার নাম হলো - ওয়েটেজ মুভিং এভারেজ।  

 

এই পোস্টে আমরা সিম্পল মুভিং এভারেজ কি ও কিভাবে নির্ণয় করা হয় এবং এর ব্যবহারের গুরুত্ব কি তা জানতে চেষ্টা করবো। 

 সিম্পল কথার অর্থ হলো সরল বা সাধারণ। মুভিং কথার অর্থ হলো যা ক্রমশ চলমান। এভারেজ মানে হলো গড়। এখানে কতক গুলো ক্যান্ডেলের ক্লোজিং প্রাইস বা শেষ দামের গড় বোঝানো হয়। এককথায় সিম্পল মুভিং এভারেজ বলতে বোঝায় কতক গুলো ক্যান্ডেলের অর্থাৎ সময় পরিসরের দামের চলমান গড়। 

 

প্রথমে আমরা বোঝার চেষ্টা করি সিম্পল মুভিং অ্যাভারেজ কি? অ্যাভারেজ বলতে আমরা বুঝি কতগুলি সংখ্যার যোগফলকে ওই সম সংখ্যক অংক দ্বারা ভাগ করলে যে ভাগফল পাওয়া যায় তাই হলো ঐ সংখ্যাগুলোর গড় বা অ্যাভারেজ। যেমন ধরুন ৫+৮+৩+১২=২৮ এখানে মোট সংখ্যার অংক হল ৪, তো এই ২৮  কে ৪ দ্বারা ভাগ করলে ৭ ভাগফল পাওয়া যায়। ৭ হলো এই চারটি সংখ্যার গড়। 

 

সাধারণত ক্যান্ডাল স্টিক চার্টের প্রতিটা ক্যান্ডেলের ক্লোজিং ভ্যালু নিয়ে যোগ করে সেই যোগফল কে ক্যান্ডেলের সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে যে ভাগফল পাওয়া যায় তাই হয় সেই কয় ক্যান্ডেলের গড় মান। যেমন যদি দশটি ক্যান্ডেলের ক্লোজিং ভ্যালু নিয়ে যোগ করে ১০ দিয়ে ভাগ করার ফলে যে মান বের হয় তাকে বলা হয় টেন সিম্পল অ্যাভারেজ। ক্যান্ডেল যেহেতু বিভিন্ন টাইম ফ্রেমের,সাধারনত পাঁচ মিনিট থেকে শুরু করে ছয় মাস বা এক বছর সময়ের হতে পারে, তাই এই গড় বিভিন্ন টাইম ফ্রেম অনুযায়ী প্রকাশ করা হয়। 

 

সচরাচর একদিনের টাইম ফ্রেম ব্যবহার করা হয় বলে, যতদিনের ক্যান্ডেল ব্যবহার করা হয় তত দিনের সিম্পল মুভিং অ্যাভারেজ বলা হয়। যেমন টোয়েন্টি ডেজ মুভিং অ্যাভারেজ বা ফিফটি ডেজ মুভিং অ্যাভারেজ বা হান্ড্রেড ডেজ মুভিং অ্যাভারেজ বা টু হান্ড্রেড ডেজ মুভিং অ্যাভারেজ। সিম্পল মুভিং অ্যাভারেজকে SMA বা শুধু MA দিয়ে প্রকাশ করা হয়।

যতগুলো ক্যান্ডেলের গড় প্রকাশ করা হচ্ছে তার অ্যাভারেজ বলা হচ্ছে ঠিক আছে কিন্তু মাঝখানে মুভিং কথাটা আসছে কেন?

এর কারণ হলো প্রতিদিন একটা করে নতুন ক্যান্ডেল তৈরি হয় আর বামদিকের শেষ ক্যান্ডেল টাকে বাদ দিয়ে নতুন ক্যান্ডেলটাকে ধরে যোগফল ও তার গড় বের করা হয়, এর ফলে এই গড়ের যে রেখাচিত্র সেটা ক্রমশ এঁকেবেঁকে চলে তাই একে মুভিং অ্যাভারেজ বলা হয়। যদিও এই রেখার বক্রতা ক্যান্ডেল স্টিক চার্টের থেকে কম হয়। যত বেশি দিনের গড় বার করা হবে এই রেখাটি তত বেশি সরল   হবে। 

 

এক্সপোনেনসিয়াল মুভিং অ্যাভারেজ বের করার ক্ষেত্রে সবথেকে শেষ ক্যান্ডেল কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং সব প্রথমের ক্যান্ডেল কে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটি একটু জটিল বিষয়। এক্সপোনেনসিয়াল মুভিং অ্যাভারেজকে EMA দ্বারা প্রকাশ করা হয় । আজকে যেহেতু আমাদের টেকনিক্যাল আলোচনার প্রথম দিন তাই আজ আমরা সিম্পল মুভিং অ্যাভারেজ নিয়ে কিছু আলোচনা করি, পরে কোন এক সময় এক্সপোনেনসিয়াল মুভি অ্যাভারেজ নিয়ে আলোচনা করা যাবে।

 

Simple moving average indicator 20, 50,100,200

 

মুভিং অ্যাভারেজ এর ব্যবহার নিয়ে একটু আলোচনা


 ছবিতে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন ক্যান্ডেল স্টিক চার্টের এর সাথে চারটে বিভিন্ন রঙের সরু থেকে মোটা দাগ দেখতে পাচ্ছেন। সবথেকে সরু নীল রঙের দাগটা হচ্ছে টোয়েন্টি ডেজ মুভিং অ্যাভারেজ অর্থাৎ এটি একেবারে ডান দিক থেকে পরপর বাঁদিকে গেলে কুড়ি তম ক্যান্ডেলে পর্যন্ত মোট কুড়িটি ক্যান্ডেলের গড়মান নির্দেশ করছে। তার থেকে একটু মোটা গোলাপী রঙের যে দাগটা দেখা যাচ্ছে এটা ফিফটি ডেজ মুভিং অ্যাভারেজ বোঝাচ্ছে। অর্থাৎ ডান দিক থেকে ক্রমশ বাদিকে গেলে ৫০ টা ক্যান্ডেলের গড় মান প্রকাশ করছে। তার নিচে যে হলুদ দাগটা দেখা যাচ্ছে এটা হল ১০০ দিনের ১০০ টা ক্যান্ডেলের মুভিং অ্যাভারেজ। সব নিচে যে কালো দাগটা দেখা যাচ্ছে সেটি হল ২০০ দিনের ২০০ টা ক্যান্ডেলের মুভিং অ্যাভারেজ।

 কিভাবে মুভিং অ্যাভারেজ কে ব্যবহার করব ?

যদি আমরা সমস্ত মুভি অ্যাভারেজ গুলোকে সরিয়ে দিয়ে শুধু চার্ট দেখি তাহলে দেখবো ক্যান্ডেল গুলো বড্ড বিক্ষিপ্তভাবে উপর নিচে হয়ে রয়েছে কিন্তু আমরা যদি ক্যান্ডেল বাদ দিয়ে শুধুমাত্র অ্যাভারেজ ইন্ডিকেটর দেখি তাহলে দেখতে পাবো, এই ইন্ডিকেটর ক্যান্ডেল গুলোর মত অত বেশি বিক্ষিপ্ত নয়। অর্থাৎ ইন্ডিকেটরের ব্যবহার আমাদের বাজারের বিক্ষিপ্ততা হ্রাস করতে সহায়তা করে।

 এছাড়া ইন্ডিকেটরকে ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন রকম স্ট্র্যাটেজি তৈরি করতে পারি। যেমন যখন যখন কোন স্টক বা ইটিএফ টোয়েন্টি ডেজ মুভিং অ্যাভারেজ কে নিচে থেকে ক্রস করে উপরে উঠবে তখন আমরা  স্টক বা ইটিএফ এ এন্ট্রি নিতে পারি, আবার যখন উপর থেকে নিচে ক্রস করবে তখন সেই স্টক বা ইপিএফ থেকে আমরা এক্সিট হতে পারি। এর ফলে ছোট ছোট সুইং গুলোকে কাজে লাগিয়ে আমরা লাভবান হতে পারি।

অনেক ক্ষেত্রে বড় টাইম ফ্রেমের এভারেজ স্টকের বা ইনডেক্সের সাপোর্ট বা রেজিস্টেন্স হিসাবে কাজ করে। আমরা যারা একটু বেশি দিনের জন্য কোন স্টক বা ইনডেক্সে ইনভেস্ট করতে চাই তাদের জন্য ওই স্টক বা ইনডেক্স যখন 100 বা 200 মুভিং অ্যাভারেজ এ এসে সাপোর্ট নেয় তখন আমরা ওই স্টক বা ইনডেক্সের ইটিএফে এন্ট্রি নিতে পারি। এক্ষেত্রে ওই স্টক বা ইনডেক্সের আর খুব বেশি নিচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

 এছাড়া মুভিং অ্যাভারেজের ক্রস ডাউন বা ক্রস আপকে কাজে লাগিয়ে অনেক স্ট্রাটজি তৈরি করা যায় যেমন ২০০ দিনের মুভিং অ্যাভারেজ কে ৫০ দিনের মুভিং অ্যাভারেজ যখন উপর থেকে নিচে ক্রস করে অর্থাৎ ক্রস ডাউন হয় তখন আমরা ধরে নিই যে বাজার এখন ডাউন চলবে। আবার যদি 200 দিনের মুভিং অ্যাভারেজকে ৫০ দিনের মুভিং এভারেজ নিচ থেকে উপরের দিকে ক্রস করে অর্থাৎ ক্রস আপ হয়, তখন বাজার চাঙ্গা বলে মনে করি।

 এই লেখা পড়ে যদি কিছু উপকার বুঝতে পারেন, তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। আর যদি কিছু জানার বা জানানোর থাকে কমেন্ট বক্স আপনার জন্য খোলা আছে। 👇

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ইটিএফ বাংলা একটি পার্সোনাল ফাইনান্স এর শিক্ষা মূলক প্রতিষ্ঠান। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url