শেয়ার বাজারে বেশির ভাগ ট্রেডার লস করে কেন?
Why maximum traders losse in stock market |
ETF Bangla ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগত জানাই। আজ আমরা শেয়ার বাজারের এক অপ্রিয় সত্য বিষয়ে আলোচনা করবো, বিষয়টি হলো "শেয়ার বাজারে কেন অধিকাংশ ট্রেডার লস করে ?"
এটা দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে শেয়ার বাজারে ট্রেডিং করতে গিয়ে প্রচুর লোক প্রচুর টাকা লস করে। এই কারণে শেয়ার বাজার নিয়ে সাধারণ লোকের মনে একটা ভয় কাজ করে। শেয়ার বাজারে অনেক রিস্ক! ওখানে যাব না!! ওখানে গেলেই টাকা লস হবে!!!
যারা শেয়ার বাজার সম্পর্কে সেভাবে কিছু জানে না তাদের মনেও কিন্তু একটা ভয় আছে শেয়ার বাজার সম্পর্কে। এবং সত্যি কথা বলতে আমাদের বাঙালীদের 98% লোকের মধ্যেই আছে । আমি নিজে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করি এবং চাই যে সব ভারতীয় বাঙালি শেয়ার বাজারে অংশগ্রহণ করুক, তাই শেয়ার বাজার বিষয়ে অনলাইন ও অফলাইন মাধ্যমে আলোচনা করি, সেই সূত্রে অনেক মানুষ আমাকে ফোন করেন এবং যারা ফোন করেন তাদের মধ্যে অনেকেই কিন্তু শিখবেন মনে করেন প্রচুর টাকা লোকসান করার পরে । আবার অনেকে আছেন যারা শেয়ারবাজারে নামার আগে ভালোভাবে শিখে নামতে চান, কিন্তু এদের সংখ্যাটা অল্প। অনেকেই আছেন, বন্ধু-বান্ধবদের কথায় এবং টাকার নেশায়, বা অল্প সময়ে লাভের আশায় বিপজ্জনক মাধ্যমে ট্রেডিং শুরু করে এবং দেখা যায় তারা প্রচুর টাকা লস করে।
বেশিরভাগ লোকেরই ধারণা, শেয়ার বাজারে এলেই টাকা পাওয়া যাবে। যেন, শেয়ার বাজারে কোথাও টাকা রাখা আছে, এলেই টাকা পাওয়া যাবে। অনেকটা ফিক্সড ডিপোজিট এর মতো । এমনকি অনেকে ফোন করে জিজ্ঞেসও করেন, দাদা… শেয়ার বাজারে যে টাকা পাওয়া যাবে এমন কোনো কি গ্যারান্টি আছে? আপনি কি এমন কিছু বলতে পারেন যাতে গ্যারান্টেড রিটার্ন হয়? বেশি চাইছি না জাস্ট ১০% পেলেই হবে তবে গ্যারান্টি চাই ।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে শেয়ারবাজারের কোন গ্যারান্টি নেই এবং গ্যারান্টি জিনিসটা কাজ করে না এবং যারা গ্যারান্টি দেন, তারাও ঠিক কাজ করেন না । কারণ গ্যারান্টি জিনিসটা শেয়ার বাজারে দেওয়া চলে না ।
আরেক শ্রেণীর লোক আছে যারা ভাবে শেয়ার বাজারে কিছু শেখার দরকার নেই । শেয়ার ট্রেডিং মানে কি? আপনাকে শেয়ার কিনতে হবে, শেয়ার বেচতে হবে, মানে কেনাবেচা করার ব্যাপার। তাই আমি শেয়ারের মধ্যে ব্যাপারটা সীমাবদ্ধ রাখছি । ধরে নিই আমরা শেয়ার কেনাবেচা করছি ।
অনেকেই ভাবেন যে – শেয়ারবাজারে তো কিনব বেচবো, শিখতে যাবো কেন? জানার কি আছে? শেয়ার কিনবো, তারপর দাম বাড়বে… বেচে দেবো।
আরেকটা ক্যাটাগরির লোক আছেন, যারা শেয়ারের দাম নিয়ে বেশি ভাবিত। কোম্পানির অবস্থা কেমন চলছে তা দেখার দরকার নেই, দামটা অনেক কম পাচ্ছেন, কেবল এটাই বিবেচ্য ।
মানে ধরুন কোনো কোম্পানির শেয়ারের আগে দাম ছিল অনেক টাকা । দামটা এখন অনেক কমে গেছে, যেমন ধরুন ইয়েস ব্যাংক। আগে প্রচুর দাম ছিল, আর এখন দাম অনেক কমে গেছে। অনেক কম দামে পাচ্ছি শেয়ারটা। অতএব কিনে ফেলি । দামটা হচ্ছে এঁদের কাছে একমাত্র বিবেচ্য ব্যাপার। অথচ কোম্পানিটা কি অবস্থায় আছে, কোম্পানির শেয়ারের দামটা কেন পড়ছে, সেটা কিন্তু অনেকেই ভাবেন না। শুধু দাম দেখে কিনে ফেলছেন এবং এই করতে গিয়ে কিন্তু বহু লোক বহু টাকা লস করেন ।
আবার অনেকে আছেন যখন শেয়ারের দাম বাড়ছে তখন কোন দামে শেয়ারটা কিনছেন খেয়াল নেই, শুধু হুজুগের বশে – শেয়ারের দাম বাড়ছে বলে কিনে ফেললেন। ফলে, কোন শেয়ার অত্যন্ত বেশি টাকায় কেনা হয়ে গেল । একে বলা হয় BULLS TRAP, অনেক সময় হয় কি, শেয়ারটা অনেক বেশি দামে কিনে ফেলায়, সেটা আটকে থেকে গেল। কোন দামে শেয়ার কিনেছেন তার হুঁশ নেই, একদম সর্বোচ্চ দামে কিনে ফেলেছেন । এবং তারপর দেখা যায় শেয়ারের দাম আস্তে আস্তে পড়ে গেল ।
শেয়ারবাজারে তো সবসময়ই দাম ওঠে ও পড়ে, ফলে শেয়ারের দাম যখন অনেকটা পড়ে যায়, তখন লোকেদের মনে হতাশা বাড়তে থাকে। তখন খালি মনে হতে থাকে যে দামটা এত পড়ে গেছে… আমি কোথায় কিনেছি !! সে তখন কি করবে তাই নিয়ে একটা প্যানিক তৈরি হয়।
এবার যেটা বলছি সেটা একটা অন্যরকম লোকসানের ব্যাপার। সেটা হচ্ছে যখন শেয়ারটা কেনা হয়েছিল তখন অনেক হাই বা বেশি দাম ছিল।
এখন শেয়ারের দাম পড়ে গেছে। কিন্তু যখন দাম পড়ছে, তখন, সেই অবস্থায় ক্যাপিটাল বাঁচাবার কৌশল জানেন না বলে অনেকে কিন্তু শেয়ারবাজারে লোকসান করেন। আসলে বিভিন্ন ট্রেডিং টেকনিক না জানার কারণে এইসব লোকসান হয়। যখন ক্রমাগত দাম পড়ে যাচ্ছে, তখন ফিউচার বা অপশন ট্রেডিং করে কিন্তু ক্যাপিটাল অনেকটা বাঁচিয়ে দেওয়া যায়। এরকম অনেক পদ্ধতি আছে, কিন্তু সেগুলো অনেকেই জানেন না। এটা আসলে লোকেদের না জানার জন্য লোকসান। অনেকেই ভাবেন যে দামটা পড়ে গেছে, অপেক্ষা করি দামটা আবার বাড়বে।
তাঁরা আশা করে থাকেন যে আগামী দিনে দামটা আরো বাড়বে, কিন্তু সেটা নাও হতে পারে বরং দামটা আরো বেশি করে পড়েও যেতে পারে। সুতরাং শেয়ার কেনার সময় সেটা কিন্তু আমাদের ভেবে রাখতে হবে দামটা পড়ে গেলে আমি কি করবো । অনেক সময় দেখা গেছে শেয়ারের দাম ৯০% বা আরো বেশি পড়ে গেছে। যেমন ধরুন পিসি জুয়েলার্স, দেওয়ান হাউসিং ফিনান্স, ইন্ডিয়াবুলস হাউসিং ফিনান্স, ইয়েস ব্যাঙ্ক এদের সকলেরই প্রায় ৯০ শতাংশের ওপরে দাম পড়ে গেছে।
কিন্তু শেয়ারের দাম যখন পড়ে যাচ্ছিল, তখন কিন্তু আপনারা ক্যাপিটাল বাঁচাতে পারতেন যদি আপনারা ট্রেডিং টেকনিকগুলি ঠিকঠাক জানতেন। কিন্তু বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীরাই কিন্তু এসব টেকনিক জানেন না ও তার জন্য কিন্তু বহু টাকা লস করেন। অতএব শেয়ারবাজারে জেনে বুঝে বিনিয়োগ করুন আপনি যতটুকু টাকা ইনভেস্ট করতে চান, জেনে বুঝে করুন।
এই জন্যই আমরা ইটিএফ বাংলা প্ল্যাটফর্ম এ সর্বদা কোনো একক শেয়ার না কিনে ইন্ডেক্স ভিত্তিক ইটিএফ এ বিনিয়োগ করার জন্য বলি। ইন্ডেক্স যেহেতু এক্সচেঞ্জ দ্বারা পরিচালিত এবং নিয়ন্ত্রিত হয় তাই সেখানে ভয় অনেকটাই কমে যায়। আমাদের হয়ে নিয়মিত নজরদারি করে এক্সচেঞ্জ।
ইটিএফ বাংলা একটি পার্সোনাল ফাইনান্স এর শিক্ষা মূলক প্রতিষ্ঠান। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url