বিনিয়োগের বৈচিত্র্য Diversification in investment

www,etfbangla.com

বিনিয়োগের বৈচিত্র্য (Diversification): একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল  

    বিনিয়োগের বৈচিত্র্য (Diversification) হলো এমন একটি কৌশল, যেখানে একজন বিনিয়োগকারী তার সম্পদকে বিভিন্ন প্রকার বিনিয়োগের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। এর উদ্দেশ্য হলো একটি নির্দিষ্ট শেয়ার, সেক্টর, বা সম্পদশ্রেণির পারফরম্যান্স খারাপ হলে অন্য বিনিয়োগগুলি সেই ক্ষতি পূরণ করতে পারে। সহজ কথায়, এটি এক ধরনের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি, যেখানে বলা হয়, "সব ডিম এক ঝুড়িতে রাখবেন না।"  


বিনিয়োগের বৈচিত্র্যের কারণ ও প্রয়োজনীয়তা

১. ঝুঁকি কমানো (Risk Reduction):  

    যেকোনো একক শেয়ারে বিনিয়োগ করলে তার কর্মক্ষমতার উপর আপনার সম্পূর্ণ লাভ বা ক্ষতি নির্ভর করে। কিন্তু, যদি আপনি বিভিন্ন সেক্টর বা শেয়ারে বিনিয়োগ করেন, তাহলে একটি খারাপ পারফরম্যান্স অন্য একটি ভালো পারফরম্যান্স দিয়ে ক্ষতি সামলে নিতে পারে।  

 ২. অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া:  

    অর্থনীতি সবসময় একটি নির্দিষ্ট গতিতে চলে না। কিছু সময় প্রযুক্তি সেক্টর ভালো পারফরম্যান্স করে, আবার কোনো সময় ব্যাংকিং সেক্টর এগিয়ে যায়। বৈচিত্র্যের মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন সেক্টরের পরিবর্তনের সুবিধা নিতে পারেন।  

 ৩. আর্থিক স্থিতিশীলতা:  

    বিভিন্ন প্রকার সম্পদে বিনিয়োগ করলে আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সহজ হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি শেয়ার বাজারে পতন ঘটে, তবে সোনার মতো নিরাপদ সম্পদ হয়তো সেই সময়ে ভালো পারফরম্যান্স করবে।  

 ৪. ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা মোকাবিলা: 

    কোনো বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ সঠিকভাবে অনুমান করা কঠিন। বৈচিত্র্যের মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন সম্পদে বিনিয়োগ করে ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা মোকাবিলা করতে পারেন।  


কীভাবে বৈচিত্র্য নিশ্চিত করবেন?  

১. বিভিন্ন সম্পদশ্রেণি (Asset Classes)

    বিনিয়োগের সময় শেয়ার, বন্ড, সোনা, রিয়েল এস্টেট, এবং মিউচুয়াল ফান্ডের মতো বিভিন্ন সম্পদশ্রেণিতে বিনিয়োগ করা উচিত। এতে ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।  

২. বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগ:  

    শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের সময় একাধিক সেক্টর, যেমন তথ্যপ্রযুক্তি, ব্যাংকিং, স্বাস্থ্যসেবা, এবং ভোক্তা সামগ্রীর মধ্যে আপনার বিনিয়োগ ছড়িয়ে দিন।  

৩. ভৌগোলিক বৈচিত্র্য:  

    শুধুমাত্র ভারতের শেয়ারে বিনিয়োগ না করে আন্তর্জাতিক ইটিএফ বা ফান্ডে বিনিয়োগ করলে আপনি বৈশ্বিক অর্থনীতির সুবিধা নিতে পারবেন।  

৪. বিভিন্ন সময়ের জন্য পরিকল্পনা:

    দীর্ঘমেয়াদি এবং স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্যের জন্য আলাদা বিনিয়োগ পরিকল্পনা করুন। এতে ঝুঁকি এবং প্রত্যাশিত রিটার্নের মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখা যায়।  


বিনিয়োগে বৈচিত্র্যের উদাহরণ  

    ধরা যাক, আপনি ১,০০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করতে চান। নিচে বৈচিত্র্যপূর্ণ বিনিয়োগের একটি উদাহরণ দেওয়া হলো:  

- শেয়ার বাজার: ৫০,০০০ টাকা (বিভিন্ন সেক্টরের ইকুইটি ইটিএফ)  

- বন্ড: ২০,০০০  টাকা (বণ্ড ইটিএফ)

- মূল্যবান ধাতু: ২০,০০০  টাকা (সোনা-রূপার ইটিএফ)

- রিয়েল এস্টেট: ১০,০০০  টাকা (ইনভিট InvIT বা রেইট REIT)

    এই পদ্ধতিতে আপনার ঝুঁকি কমবে এবং একটি নির্দিষ্ট বিনিয়োগে ক্ষতির প্রভাব আপনার সম্পূর্ণ পোর্টফোলিওতে পড়বে না।  

    বিনিয়োগের বৈচিত্র্য একটি অত্যন্ত কার্যকরী কৌশল, যা একজন বিনিয়োগকারীকে ঝুঁকি কমাতে এবং দীর্ঘমেয়াদে ভালো রিটার্ন পেতে সাহায্য করে। তবে, এটি করার আগে আপনার আর্থিক লক্ষ্য, ঝুঁকি গ্রহণ ক্ষমতা এবং বাজার সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা প্রয়োজন।  

    সঠিকভাবে পরিকল্পনা করে বিনিয়োগের বৈচিত্র্য নিশ্চিত করুন এবং আপনার সম্পদ বৃদ্ধি করুন।  

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ইটিএফ বাংলা একটি পার্সোনাল ফাইনান্স এর শিক্ষা মূলক প্রতিষ্ঠান। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url